ভাইকিং: একটি জাতির জন্ম” এক মহাকাব্যিক ঐতিহাসিক নাটক, যা ক্ষমতা, বিশ্বাসঘাতকতা, ভাইয়ের ভালোবাসা ও জাতি গঠনের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায়। এটি এক বিশৃঙ্খল যুগে, নর্দার্ন ইউরোপের বরফঢাকা জমিতে গড়ে ওঠা জাতির জন্মকাহিনি, যেখানে দুই ভাই, এক সিংহাসন এবং একটি স্বপ্ন—একত্রিত হয় এক অভূতপূর্ব পরীক্ষার মুখোমুখি।

ভ্লাদিমির, এক তরুণ রাজপুত্র, যিনি ছোটবেলা থেকেই হারিয়েছেন তার মা’কে ও বাবার ভালোবাসা। রক্তের রাজনীতির ভয়ংকর বাস্তবতা তাকে শিশু বয়সেই কঠিন করে তোলে। তার বড় ভাই ইয়ারোপলক ইতোমধ্যে সিংহাসনে বসেছে, কিন্তু ক্ষমতার মোহ এবং বাইরের শত্রুদের প্ররোচনায় সে হয়ে পড়েছে কঠোর, নিষ্ঠুর ও সন্দেহপ্রবণ।

তাদের তৃতীয় ভাই ওলেগ, যাকে শিশুকালে অন্য গোষ্ঠীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল কূটনৈতিক শান্তির জন্য, হঠাৎ করে ফিরে আসে যখন রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ছে বাইরের আক্রমণ এবং অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির কারণে। ভ্লাদিমির দাঁড়ায় একটি কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি: সে কি তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবে, না কি ঐক্যের জন্য আত্মত্যাগ করবে?

ভ্লাদিমির শান্তিপ্রিয়, দূরদর্শী এবং পরিণত। সে দেখতে পায় যে কেবল যুদ্ধ নয়, একটি নতুন জাতীয় চেতনা এবং একতা প্রতিষ্ঠাই হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান। কিন্তু তার এই উচ্চ আদর্শ সবসময় বাস্তবের সাথে খাপ খায় না। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রতারণা, বিশ্বাসঘাতকতা, এবং আত্মীয়ের হাতেই মৃত্যু বরণ করা সম্ভাবনা।এই জটিল রাজনৈতিক পটভূমিতে, ভ্লাদিমিরের জীবনে আসে রোগ্নেদা, এক রাজকুমারী যাকে সে প্রথমে জয় করে অস্ত্রের মাধ্যমে, কিন্তু ধীরে ধীরে ভালোবাসা ও সম্মানের পথেই তার হৃদয় জয় করে। রোগ্নেদার মাধ্যমে সে বোঝে যে প্রেম মানে শুধু জয় নয়, বরং সম্মান, ক্ষমা এবং যৌথ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার অঙ্গীকার।

ভ্লাদিমির, শেষপর্যন্ত, নিজ ভাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বাধ্য হয় যখন বোঝে যে অন্যথায় তার জনগণ ধ্বংস হয়ে যাবে। যুদ্ধ হয় হৃদয়বিদারক, রক্তাক্ত ও নৈতিক দিক থেকে বিভ্রান্তিকর। তবে যুদ্ধ শেষে, ভ্লাদিমির শুধু একজন বিজয়ী যোদ্ধা নয়, বরং একজন জাতির স্থপতি হয়ে ওঠে।

তিনি ধর্মীয় ঐক্য ও সামাজিক স্থিতি আনয়নের জন্য খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং তার শাসনকালে কিয়েভ রুস এক নতুন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধ্যায়ে প্রবেশ করে—একটি জাতির জন্ম ঘটে।