ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত এক ছোট গ্রামে বাস করে এক কিশোরী, যার নাম ফারহা। শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর এই মেয়েটি জানত না, যুদ্ধের লেলিহান আগুন একদিন তার স্বাভাবিক জীবনকে তছনছ করে দিবে। ১৯৪৮ সালের ফিলিস্তিনে, ইসরায়েলি আক্রমণের পর, ফারহার ছোট্ট গ্রামটি এক বিধ্বংসী অগ্নিগোলক হয়ে ওঠে। যুদ্ধের বিভীষিকা সে দেখতে থাকে, এক বন্দী অবস্থায়, যেখানে তার কাছে জীবন আর মৃত্যুর মাঝে সীমা রেখে দেয়। তার গল্প হয়ে ওঠে এক রক্তাক্ত যুদ্ধের বিরুদ্ধে জীবনের অবর্ণনীয় সংগ্রাম।

সিনেমার শুরুতেই ফারহা, ১৪ বছর বয়সী একটি মেয়ে, তার বাবা-মায়ের সঙ্গে গ্রামের ছোট্ট একটি বাড়িতে থাকে। তার মন ছিল পূর্ণ উদ্দীপনায়, ভবিষ্যতের স্বপ্নে মগ্ন। কিন্তু তার শান্তিপূর্ণ জীবন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়, যখন ইসরায়েলি সেনারা গ্রামে আক্রমণ করে। তাদের বর্বরতায় ছোট্ট গ্রামটি মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যায়।

তাদের গ্রাম আক্রমণের সময়, ফারহাকে তার বাবা একটি ছোট্ট, অন্ধকার কক্ষে লুকিয়ে রাখেন। “চুপ থাকতে হবে, আমি ফিরে আসব,”—এটি ছিল তার শেষ কথা। ফারহা সেই ঘর থেকে বাহিরের বিধ্বংসী দৃশ্যগুলি দেখতে থাকে। সে দেখে, কিভাবে নিরপরাধ মানুষগুলোকে নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে, কিভাবে বাড়িঘর পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে, এবং কিভাবে সামরিক বাহিনী মানুষের উপর নিষ্ঠুর অত্যাচার চালাচ্ছে।

দুর্বিসহ এক পরিস্থিতির মধ্যে ফারহা তার ভেতরকার ভয় এবং হতাশা অনুভব করতে থাকে। দিন দিন তার অনুভূতি আরো তীব্র হয়, এবং সে বুঝতে পারে যে তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত আসছে। ছোট্ট ঘরটি যেন মৃত্যুর কাছাকাছি একটি জেলখানা হয়ে ওঠে, আর বাইরে ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক, মৃত্যুর গন্ধ। তার মন অস্থির হয়ে ওঠে, কিন্তু তার বাবা ফিরে আসবেন কিনা, সেটি একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।

এই সিনেমা শুধু যুদ্ধের নির্মমতা প্রদর্শনই করে না, বরং যুদ্ধের পরিণতি, পরিবারের হারানো, এবং একটি কিশোরীর আত্মবিশ্বাস ও সাহসিকতার গল্প তুলে ধরে। সে তার বাবা-মাকে খুঁজে পাবে কি? তার জীবনের দুঃখ এবং আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারবে কি? যুদ্ধের পরিণতিতে সে কি কখনো নিজের শান্তি ফিরে পাবে?

ফারহা এমন এক সিনেমা, যা যুদ্ধের তিক্ততা, মানবাধিকার এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের মূল্য সম্পর্কে গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, যখন একটি শিশুর চোখে পৃথিবী ভেঙে পড়ে, তখন তার ভিতরে এক নতুন সাহস জন্ম নেয়। আর সেই সাহসই তাকে বাঁচিয়ে রাখে, চরম পরিস্থিতিতেও।

এটি শুধুমাত্র একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, বরং মানবতার লড়াইয়ের এক সময়ানুবর্তী চিত্র, যেখানে এক কিশোরী তার জীবন, অস্তিত্ব এবং স্বপ্নের জন্য সংগ্রাম করছে। ফারহা একটি মর্মস্পর্শী গল্প, যা দেখার পর দর্শককে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ভাবায়, একটি প্রশ্ন রেখে যায়: যুদ্ধের মাঝে কি কখনও শিশুদের নির্দোষতা বাঁচানো সম্ভব?